R

T

H

S

 

 

রঘুনাথবাড়ী রামতারক উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস

 

        আজ থেকে ১০৯ বছর আগে বহু ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করে 1915 খ্রিষ্টাব্দের 29th January তে রঘুনাথবাড়ী রামতারক উচ্চবিদ্যালয় তার পথ চলা শুরু করে এবং 2024 সালে ১১০- তম বর্ষে পদার্পন করে।

 

         তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে পাঁশকুড়া সন্নিহিত পল্লীসমাজের জনগন শিক্ষাদীক্ষায় ছিল পিছিয়ে। কুসংস্কারের বেড়াজালে ছিল আবদ্ধ। সংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে শিক্ষা যে অপরিহার্য একথা অনুধাবন করে যিনি ঈশ্বরের দূতরূপে এতদ অঞ্চলে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি হলেন স্বর্গীয় রামতারক মহান্ত মহারাজ।

 

         রঘুনাথবাড়ীর  তৎকালীন মধ্য ইংরাজী বিদ্যালয়টিকে উচ্চ-বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার অদম্য প্রয়াস চালিয়ে, সমস্ত বাধা তুচ্ছ করে জোগাড় করলেন কষ্টার্জিত সাহায্য। নিজের যা কিছু সঞ্চয় ও অপরের সাহায্য দিয়ে বিদ্যালয়ের ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করলেন। কঠোর পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে আক্রান্ত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। 1914 সালে মহাপ্রয়াণ ঘটলো এই মহান মানবের । প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব পড়লো তাঁর সুযোগ্য ম্যানেজার হরেকৃষ্ণ মাইতির ওপর।

 

        ১৯১৫ সালের ২৯ মে জানুয়ারী পরিচালন কমিটি তৈরি হলো। ঐ তারিখটিই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বহু প্রচেষ্টার পর ১৯১৬ সালের ১লা জানুয়ারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২ বছরের জন্য অস্থায়ী অনুমোদন দিলেও দীর্ঘ ১২ বছর পর ১৯২৫-২৬ সালে মাসিক ১০০ টাকা হিসাবে সরকারী সাহায্য মেলে ।

 

        সমস্ত শর্তসাপেক্ষে ২-৩ বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের এই বিদ্যামন্দিরের শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিলেও সংকট ও দুর্দিন ঘনিয়ে এলো ২৯৩০ সালে। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে শুরু হয়েছে নগ্ন-সাম্রাজ্যবাদী, পৈশাচিক ব্রিটিশ সরকার বিরোধী আইন অমান্য আন্দোলন। সারা দেশের ছাত্র-সমাজের মতো, এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও ঝাঁপিয়ে পড়লো আন্দোলনে। অতর্কিতে ব্রিটিশ পুলিশের হানা, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমহাশয়দের জিজ্ঞাসাবাদ, সন্নিহিত এলাকায় পুলিশের বর্বোরোচিত তান্ডব নষ্ট করলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ। আন্দোলনে বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষক মন্ডলীর সংযোগের অজুহাতে ১৯৩২-৩৩ সাল থেকে বন্ধ হল সরকারী মাসিক সাহায্য।

 

      এরপর ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সরকারী সাহায্য বন্ধ, ছাত্রসংখ্যা হ্রাস পাওয়া, শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন পাওয়া -ইত্যাদির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৩৮ সালে নোটিশ দেয় ছাত্রসংখ্যা অন্তত: ২০০ না হলে এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রতিনিধি মহান্ত অচ্যুতানুজ দাস মহারাজ মাসিক ব্যয়ের অভাব পূরনের অঙ্গীকার পত্র না দিলে, বিদ্যালয়ের সাময়িক অনুমোদন বাতিল করা হবে। এই দুর্দিনে মহারাজ লিখিত অঙ্গীকার পত্র দিয়ে এবং ম্যানেজার হরেকৃষ্ণ মাইতির প্রস্তাব- ক্রমে বিদ্যালয়ের স্থায়ী আয়ের উদ্দেশ্যে সরস্বত্যা মৌজার জমিদারী স্বত্ব বিদ্যালয়ের অনুকূলে ১৯৩৮ সালে দানপত্র করে এই সংকট মোচন করেন ।

 

         যে ছাত্ররা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিজেদের সমর্পন করেছিলেন তাঁদের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ের সাময়িক ক্ষতি হলেও আমরা তাঁদের জন্য গর্বিত। শাসকবর্গের জিদের বিরূদ্ধে দাঁতে দাঁত চেপে শিক্ষক মহাশয়গন যদি যৌথ সংগ্রাম চালিয়ে না যেতেন, তাহলে এই বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যেত। রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সদস্য ও শিক্ষকদের, শাসকবর্গের নির্দেশে অপসারিত করা হল। বিদ্যালয়ের পাঠাগারে রক্ষিত শ্রী অরবিন্দের গীতা, গান্ধীজীর আত্মকাহিনী, মার্কসবাদ, লেলিন বাদ সম্বন্ধীয় বহু পুস্তকের বুহ্ন্যৎসব করতে হয়েছিল।

১৯৩৭ - ৩৮ সাল থেকে মাসিক ১০০ টাকা হিসাবে পুনরায় সাহায্যের বরাদ্ধ হয়। ১৯৩৯ সালের পর বিদ্যাঙ্গনে সুদিন এলো। ১৯৪০ সালে বাংলার গভর্নর হাবার্ট সাহেব বিদ্যালয় পরিদর্শন করে খুবই প্রীত হন। সুদীর্ঘ ৩০ বছর পর ২২/৬/৪৫ -তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিনা শর্তে বিদ্যালয় অনুমোদন লাভ করে।

 

        শিক্ষা-বিভাগের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের সুনজরে আসায় বিদ্যালয়টি ১৯৫৭ সালে কলা, বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগসহ একাদশশ্রেনীর উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বিদ্যালয়ের গৃহ ও আসবাবপত্রের জন্য ১৯৪৯-৫০ সালে মোট ৫৩৫৩ টাকা সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যায়। ১৯৫৭ সালে বিজ্ঞানাগার, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রাদির জন্য ৪৩,৭৫০ টাকা, ১৯৫৯ সালে কলাবিভাগীয় গৃহ ও আসবাবপত্রের জন্য ৪৩, ১২৫ টাকা, পুনরায় বিজ্ঞানবিভাগের গৃহ ও যন্ত্রপাতির জন্য ৩৯, ৮৪৩ টাকা এবং বানিজ্য-বিভাগের গৃহ ও যন্ত্রপাতির জন্য ১৮, ৮৭৫ টাকা পাওয়া যায়।

 

       শিক্ষা বিভাগের নয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭৬ সালে বিদ্যালয়টি দ্বাদশ শ্রেনীতে উন্নীত হওয়ার অনুমোদন লাভ করে। ১৯১৫ সালে যে বটবৃক্ষের বীজ রোপন করা হয়েছিল তা আজ বহু শাখা প্রশাখায় বিস্তারলাভ করেছে। এই বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ বহু ছাত্র উচ্চ-শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পড়াশুনো ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচেষ্টায় " ঊষা" নামক পত্রিকার প্রকাশ 'সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপন ও খেলাধুলো বিদ্যালয়ে এক তাৎপর্যপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে।

     বিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বিভিন্ন পেশা ভিত্তিক বিষয় যার মধ্যে যুগোপযোগী গুরুত্বপূর্ণ্য বিষয় হল কম্পিউটার। বহু ছাত্র-ছাত্রীকে এ-বিষয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়, যাতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।বর্তমানে ২০১৭ সাল থেকে আমরা বিদ্যালয়ে K-yan অর্থ্যাৎ Audio-visual ক্লাস ছাত্রদের মধ্যে তুলে ধরতে পেরেছি। তাছাড়া ২০১৭ সাল থেকে প্রযুক্তিবিদ্যাযুক্ত Robotic ক্লাস ও সুরু হয়েছে।(ATL)

 

        আনন্দঘন এক বিজয়বার্তা বয়ে নিয়ে এলো ২০২৩ তম বর্ষ।

 

" বিদ্যালয়ের ছাত্ররা করেছে রাজ্যজয়

স্থানীয়জন তাদের জানাচ্ছে শুভেচ্ছা বিনিময়।

দিকে দিকে রটি গেল মাধ্যমিকের বিজয়ধ্বনি

আমাদের সবার কাছে তুহিন-অঙ্কন হল চোখের মনি।

 

          হ্যাঁ, ২০২৩ সালে আমাদের বিদ্যালয়ের দুই কৃতি ছাত্র তুহিন বেরা ও অঙ্কন মন্ডল মাধ্যমিক পরীক্ষায় যথাক্রমে চতুর্থ ও দশম স্থান অধিকার করে বিদ্যালয়ের সম্মানকে রাজ্যের প্রতিটি ঘরে পৌছে দিয়েছে। ওদের জন্য সত্যিই আমরা গর্বিত।

 

 

       তবে দুঃখের স বলতে হচ্ছে বিভিন্ন কারনবশত আমরা ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের শততম বর্ষ 2015 সালে উদযাপন করতে পারিনি, বিদ্যালয়ের ১১০ তম শিক্ষাবর্ষে আমাদের শিক্ষামন্দিরের সাথে জড়িত প্রাক্তন সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক যাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন তাঁরা সবাই ভালো থাকুন ।